মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০১:০২ অপরাহ্ন

বাড়ছে সুদের বোঝা

বাজেটের ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে সরকার। কিন্তু এই অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে এর পেছনে সরকার সুদ পরিশোধের ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে। বাজেটের ব্যয়ের শীর্ষ কয়েকটি খাতের একটি হলো সুদ বাবদ ব্যয়। এই সুদজনিত ব্যয়ের লাগাম টানতে সচেনতা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো ব্যবহার করে এই অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না। তাই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এভাবে অর্থ নেওয়া ধারাবাহিকভাবে চলেই আসছে। এতে এই ঋণের জন্য সুদও দিতে হয়।

advertisement
আনুপাতিক বিবেচনায় বাজেটের রাজস্ব ব্যয় বা অনুন্নয়ন ব্যয়ের বড় একটি অংশ বরাদ্দ রাখতে হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য। বাজেটের মোট ব্যয়ে প্রায় ১১ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭ হাজার কোটি টাকা সুদ বাবদ ব্যয় করা হবে। প্রস্তাবিত অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চলে যাবে সুদ পরিশোধে।

অর্থাৎ সুদ পরিশোধে সরকারকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে, তা দিয়ে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় মেটানো সম্ভব। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে সুদ ব্যয়। এই ব্যয়ের ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশই যাবে সুদ পরিশোধ বাবদ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে। সহজ উৎস থাকলেও বেশি সুদের উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এতে বাজেটের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়ছে। তাই অর্থের উৎস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেটে ছিল ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা কমিয়ে ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ঠিক করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

বাজেটের ঘাটতি পূরণে প্রধানত তিনটি উৎস থেকে সহজেই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকার। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক খাত, সঞ্চয়পত্র ও বৈদেশিক উৎস। এর মধ্যে সবচেয়ে সুদ বেশি সঞ্চয়পত্রের। কিন্তু বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কম রাখলেও সরকার শেষ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকেই বেশি অর্থ সংগ্রহ করছে। এতেই বাড়ছে সরকারের সুদ ব্যয়। এটি বাজেট ব্যয় ব্যবস্থাপনার ত্রুটি। চলতি বছর সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু বাজেট সংশোধন করে তা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বছর শেষে এটি আরও বেশি হবে।

অন্যদিকে ব্যাংকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা, বাজেটে সংশোধন করে তা ৩১ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। পুরো বছরের বাজেটের হিসেবে এটি আরও কম হতে পারে। বৈদেশিক উৎসের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা থাকলেও কমিয়ে তা ৪৩ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877